অনুসন্ধান ফলাফলগুলি - Communism

সাম্যবাদ

কমিউনিজম (ল্যাটিন শব্দ ''communis'' থেকে, অর্থ 'সাধারণ, সর্বজনীন') একটি সামাজিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক এবং অর্থনৈতিক মতবাদ, যা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ। এর লক্ষ্য একটি কমিউনিস্ট সমাজের সৃষ্টি, যেখানে উৎপাদন, বিতরণ এবং বিনিময়ের উপায়গুলি সাধারণ মালিকানাধীন হবে, এবং পণ্যসমূহের বণ্টন হবে সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির প্রয়োজন অনুযায়ী। একটি কমিউনিস্ট সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সামাজিক শ্রেণি এবং পরবর্তীকালে অর্থ ও রাষ্ট্র (বা জাতিরাষ্ট্র) থাকবে না।

কমিউনিস্টরা সাধারণত স্বেচ্ছায় স্ব-শাসনের দিকে লক্ষ্য স্থাপন করে, তবে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পদ্ধতি নিয়ে তাদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা যায়। এটি একটি লিবার্টারিয়ান সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব এবং শ্রমিকদের স্ব-পরিচালনার উপর ভিত্তি করে একটি দৃষ্টিভঙ্গি এবং আরও কর্তৃত্ববাদী একটি দলনির্ভর পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে, যেখানে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটে। রাজনৈতিক বৃত্তের একটি প্রধান মতবাদ হিসেবে কমিউনিস্ট দল ও আন্দোলনগুলোকে প্রায়ই চরম বাম বা দূর-বামপন্থী বলে বর্ণনা করা হয়।

ইতিহাস জুড়ে কমিউনিজমের বিভিন্ন ধারা বিকশিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অরাজনৈতিক কমিউনিজম, মার্কসবাদী চিন্তাধারা, এবং ধর্মীয় কমিউনিজম। কমিউনিজমের বিভিন্ন চিন্তাধারার মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের বর্তমান ব্যবস্থা মূলত পুঁজিবাদ থেকে উদ্ভূত, যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং উৎপাদন প্রণালীর ভিত্তিতে দুটি প্রধান সামাজিক শ্রেণির সৃষ্টি করে। এই দুটি শ্রেণির মধ্যে সম্পর্কটি শোষণমূলক, এবং এটি শুধুমাত্র সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব। এই দুটি শ্রেণি হলো প্রলেতারিয়েত, যারা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এবং জীবিকার জন্য তাদের শ্রমশক্তি বিক্রি করতে বাধ্য, এবং বুর্জোয়া, যারা উৎপাদনের উপায়গুলির ব্যক্তিগত মালিকানার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। এই বিশ্লেষণ অনুসারে, একটি কমিউনিস্ট বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণিকে ক্ষমতায় আনবে এবং সম্পত্তির সাধারণ মালিকানার ভিত্তিতে একটি কমিউনিস্ট উৎপাদন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।

আধুনিক কমিউনিজমের ভিত্তি ১৮শ শতকের ফ্রান্সে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়, যা ফরাসি বিপ্লবের পরপরই বিকশিত হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণার সমালোচনা ১৮শ শতকের আলোকায়ন যুগে গ্যাব্রিয়েল বনো দ্য মাবলি, জঁ মেসলিয়ে, এতিয়েন-গ্যাব্রিয়েল মোরেলি, অঁরি দ্য সাঁ-সিমোঁ এবং জঁ-জাক রুশোর মতো চিন্তাবিদদের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ফরাসি বিপ্লবের সময়, ফ্রাঁসোয়া-নোয়েল বাবুফ, নিকোলাস রেস্টিফ দ্য লা ব্রেটন এবং সিলভাঁ মারেশ্যালের নেতৃত্বে কমিউনিজম একটি রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়। আধুনিক কমিউনিজমের পূর্বসূরী হিসেবে এদের গণ্য করা হয়।

২০শ শতকে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের অনুসারী বলে দাবি করা বিভিন্ন কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসে। প্রথমে ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নে এবং পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপ, এশিয়া এবং কয়েকটি অঞ্চলে। সমাজতন্ত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে কমিউনিজম, ১৯২০-এর দশকের প্রথম দিকে, আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক প্রবণতা হয়ে ওঠে।

২০শ শতকের বেশিরভাগ সময়ে, বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণ কমিউনিস্ট সরকারগুলোর শাসনে বসবাস করেছিল। এই সরকারগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিল একদলীয় শাসন, যেখানে একটি কমিউনিস্ট দল ক্ষমতায় ছিল; ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও পুঁজিবাদকে প্রত্যাখ্যান; অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং গণমাধ্যমের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ; ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা; এবং বিরোধী মত ও ভিন্নমতকে দমন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়ার পর, পূর্বে কমিউনিস্ট শাসিত বেশ কয়েকটি সরকার কমিউনিস্ট শাসন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান বা বিলুপ্ত করে। এরপর কেবলমাত্র চীন, কিউবা, লাওস, উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো অল্প কিছু নামমাত্র কমিউনিস্ট সরকার অবশিষ্ট থাকে। উত্তর কোরিয়া ব্যতীত বাকি রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার সুযোগ বাড়াতে শুরু করেছে, যদিও একদলীয় শাসন বজায় রেখেছে।

২০শ শতকের শেষের দিকে কমিউনিজমের পতনকে কমিউনিস্ট অর্থনীতির অন্তর্নিহিত অদক্ষতা এবং কমিউনিস্ট সরকারগুলোর কর্তৃত্ববাদ ও আমলাতান্ত্রিকতার প্রবণতার ফলাফল হিসেবে দেখা হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের প্রথম নামমাত্র কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ফলে, কমিউনিজম সাধারণত সোভিয়েত অর্থনৈতিক মডেলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। তবে, বেশ কয়েকজন পণ্ডিতের মতে, এই মডেল বাস্তবে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের একটি রূপে পরিণত হয়েছিল। ২০শ শতকের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোর স্মৃতি জনপরিসরে এক ধরনের মতাদর্শগত যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বিরোধী কমিউনিজম এবং কমিউনিজম-বিরোধিতার মধ্যে সংঘর্ষ দেখা যায়।

অনেক লেখক কমিউনিস্ট শাসনামলে সংঘটিত গণহত্যা এবং মৃত্যুহারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যেমন জোসেফ স্টালিনের শাসনে সোভিয়েত ইউনিয়নে অতিরিক্ত মৃত্যুহার। এই বিষয়গুলো এখনও একাধিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু, যা একাডেমিয়া, ইতিহাসচর্চা এবং রাজনীতিতে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করে, বিশেষ করে কমিউনিজম এবং কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোর উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে। উইকিপিডিয়া দ্বারা উপলব্ধ
  • প্রদর্শন 1 - 1 ফলাফল এর 1
ফলাফল পরিমার্জন করুন
  1. 1